শসা খাওয়ার উপকারিতা
শসা বা খিরা পানিসমৃদ্ধ একটি পুষ্টিকর ফল। শসা খেলে রক্তচাপ কমে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয় এবং শরীরের ওজন কমে। সম্পূর্ণ উপকার পেতে হলে আমাদেরকে খোসাসহ খিরা খেতে হবে।
শসাকে সাধারণত সবজি মনে করা হলেও এটি মূলত একটি ফল। এটি উপকারী পুষ্টি উপাদানসমৃদ্ধ একটি ফল। এছাড়াও এতে রয়েছে এন্টি অক্সিডেন্ট যা নানারোগ এবং জটিলতা থেকে মুক্ত থাকতে সহায়তা করে।
শসা নিম্ন ক্যালরিযুক্ত একটি খাবার যাতে প্রচুর পরিমাণে পানি ও আঁশ আছে। তাই এটি শরীরের পানিশূন্যতা পূরণে এবং ওজন কমানোর জন্য একটি আদর্শ খাবার।
শসার পুষ্টিগুণ
শসাতে ক্যালরি কম থাকলেও এটি ভিটামিন ও গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উপাদানে সমৃদ্ধ। ৩০১ গ্রাম ওজনের একটি খোসাসহ খিরা বা শসায় নিম্নোক্ত পুষ্টিউপাদান রয়েছেঃ
*ক্যালরিঃ ৪৫
*চর্বিঃ ০.৩ গ্রাম
*শর্করাঃ ১১ গ্রাম
*প্রোটিনঃ ২ গ্রাম
*আঁশঃ ১.৫ গ্রাম
*ভিটামিন সিঃ ৮ গ্রাম
*ভিটামিন কেঃ ৪৯ মাইক্রোগ্রাম
*ম্যাগনেসিয়ামঃ ৩৯ মাইক্রোগ্রাম
*পটাশিয়ামঃ ৪৪২ মাইক্রোগ্রাম
*ম্যাংগানিজঃ ০.২ মিলিগ্রাম
এছাড়াও শসাতে প্রচুর পানি। এর প্রায় ৯৬ শতাংশই পানি। এই কারণে পানিশূন্যতা পূরণেও এই ফলটি দারুণ কার্যকর। তবে সর্বোচ্চ ফলাফল পেতে হলে অবশ্যই ফলটি আবরণ তথা খোসাসহ খাওয়া উচিত। খোসা ফেলে দিলে এর আঁশের পরিমাণ অনেকটাই হ্রাস পায়। এছাড়া ভিটামিন ও খনিজের পরিমাণও কিছুটা কমে যায়।
শসাতে আছে এন্টি অক্সিড্যান্ট
এন্টি অক্সিডেন্ট হচ্ছে এমন অণু যা জারণকে বাধাগ্রস্ত করে। জারণ এমন এক রাসায়নিক বিক্রিয়া যা ফ্রি রেডিকেলস নামক অতি সক্রিয় জৈব অণু তৈরি করে। এই ফ্রি রেডিক্যালস শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এগুলো বেশি জমা হয়ে গেলে শরীরে নানারকম রোগব্যাধি তৈরি হয়। এই ফ্রি রেডিকেল দ্বারা ক্যান্সার, হৃদরোগ, ফুসফুসের ব্যাধির মত ভয়ঙ্কর রোগ তৈরি হতে পারে।
খিরা/শসাসহ যেসব ফল ও শাকসবজিতে প্রচুর এন্টি অক্সিডেন্ট আছে , এগুলো এসব মারাত্মক রোগ থেকে মানুষকে রক্ষা করে। ২০২০ সালের একটি গবেষণায় জানা গেছে যে, খিরা/শসাতে আছে ফ্ল্যাভোনয়েড ও ট্যানিন। এই যৌগগুলো ফ্রি রেডিক্যালকে প্রতিরোধ করে।
শসা পানিশূন্যতা দূর করে
মানব শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কার্যাবলির জন্য পানি গুরুত্বপূর্ণ। এটি তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, বর্জ্য ও পুষ্টি উপাদান পরিবহনের মতো প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত। পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি গ্রহণ করলে শরীরের কার্যক্ষমতা ও বিপাক ক্রিয়া যথাযথ থাকে। আমরা আমাদের দেহের জন্য প্রয়োজনীয় পানির বেশিরভাগ সরাসরি গ্রহণ করলেও বিভিন্ন খাবার থেকে আমাদের চাহিদার প্রায় ৪০ ভাগ পূরণ হয়। বিশেষ করে শাকসবজি ও ফলফলাদি আমাদের জন্য পানির ভাল উৎস। যেহেতু শসাতে প্রায় ৯৬ শতাংশই পানি থাকে তাই এটি আমাদের দেশের পানিশূন্যতা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
শসা ওজন কমাতে সাহায্য করে
শসা বিভিন্ন উপায়ে দেহের মেদ কমাতে সাহায্য করে। প্রথমত, এটি অতি অল্প ক্যালরিযুক্ত খাবার। ৩০০ গ্রামের একটি শসাতে মাত্র ৪৫ ক্যালরি শক্তি থাকে। অর্থাৎ, শসা পেট ভরায় কিন্তু ওজন বাড়ায় না। অতিরিক্ত ক্যালরির ভয় না থাকায় প্রচুর শসা খাওয়া যেতে পারে যা ধীরে ধীরে শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করবে।
শসাকে সালাদ, স্যান্ডউইচ অথবা পরিপূরক খাবার হিসেবে খাওয়া যায়। এটিকে উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবারের বিকল্প হিসেবেও গ্রহণ করা যায়। এছাড়াও শসাতে থাকা প্রচুর পানিও ওজন কমাতে সাহায্য করে।
শসা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে
বিভিন্ন গবেষণায় জানা গেছে যে, শসা রক্তের শর্করার মাত্রা কমাতে এবং ডায়াবেটিসের জটিলতা প্রতিরোধে সহায়তা করে। ২০১০ সালে প্রাণীদের উপর চালানো একটি গবেষণায় জানা যায় যে, শসার খোস অনেক ডায়াবেটিস সংক্রান্ত পরিবর্তনকে প্রতিরোধ করে এবং রক্তের চিনি কমায়। ২০১৬ সালে আরেকটি গবেষণায় দেখা যায় যে, শসা জারণ ক্রিয়া ও ডায়াবেটিসের জটিলতা কমাতে কার্যকরী।
শসা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
পানিশূন্যতা শরীরের পানির ভারসাম্যে পরিবর্তন সাধন করে মলের চলাচল কষ্টসাধ্য করার দ্বারা কোষ্ঠকাঠিন্য ঘটাতে পারে। শসাতে প্রচুর পানি থাকে তাই এটি পানিশূন্যতা রোধ করে। এভাবে এটি কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে । অধিকন্তু শসাতে আছে আঁশ যা আন্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে পরিপাকতন্ত্রকে ভাল রাখতে সহায়তা করে। শসাতে থাকা পেকটিন নামক আঁশ আন্ত্রিক আন্দোলনে ভূমিকা রাখে।
শসা একটি তাজা ফল যা খাবারকে করে সুস্বাদু এবং খাবারে আনে বৈচিত্র্য। তাই এটিকে সালাদ হিসেবে এবং অন্য খাবারের সাথে প্রচুর গ্রহণ করা হয়। এর উপকারিতা একে আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ ফলে পরিণত করেছে। সম্ভব হলে আমাদের নিয়মিত শসা খাওয়া উচিত।
তথ্যসূত্রঃ Healthline
Comments
Post a Comment